দুশ্চিন্তা কাটানোর ইন্দ্রজাল
আপনি কি দ্রুত কাজ দেয় এমন কোন দুশ্চিন্তা দূর করার উপায় জানতে চান,যে কাজে লাগিয়ে এই পোস্ট পড়ার আগেই উপকার পেতে পারেন?
এটা চাইলে আসুন আপনাদের উইলিস এইচ.ক্যারিয়ার কথা শোনাই। তিনি নিউ ইয়র্কের সিরাকিউসের পৃথিবী বিখ্যাত ক্যারিয়ার কর্পোরেশনের প্রধান।।তিনি একজন দারুণ ইঞ্জিনিয়ার আর শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করেন।দুশ্চিন্তা দূর করার যে গল্প তাঁর কাছে থেকে জেনেছি আমার মতে সেটাই সকলের সেরা।
মিঃক্যারিয়ার বলেছিল,, 'আমি যখন অল্প বয়সের তখন নিউ ইয়র্কের বাফেলো ফর্জ কোম্পানিতে কাজ করতাম।সে সময় লক্ষ লক্ষ ডলারের এক গ্যাস পরিস্কার যন্ত্র বসানোর জন্য কৃষ্টাল সিটির পিটসবার্গ প্লেট গ্লাস প্রতিষ্ঠানের কাজ পাই।কাজটা হলো ইঞ্জিনের ক্ষতি না করে কিভাবে গ্যাসের প্রয়োজনীয় মিশ্রণ বের করে দেয়া যায়।গ্যাস পরিস্কারের এ পদ্ধতি ছিল নতুন।আগে মাত্র একবারই অন্য পরিস্থিতিতে এর ব্যবহার হয়।আমার কাছে কৃষ্টালসিটিতে নানা অজ্ঞাত অসুবিধা দেখা দেয়।বিশেষ এক ক্ষেত্রে এটায় কাজ হল----তবে যে গ্যারান্টি দিয়েছিলাম সেভাবে হল না।
'আমার ব্যর্থতায় হতবাক হয়ে গেলাম।মনে হলো কেউ যেন আমাকে মাথায় প্রচন্ড আঘাত করেছে।এতোই দুশ্চিন্তায় পড়লাম যে ঘুমোতে পারিনি
'শেষপর্যন্ত তিনি সাধারণ বুদ্ধিতে বুঝতে পারলেন,দুশ্চিন্তা করে লাভ হবে না। তাই তিনি ভাবতে লাগলেন দুশ্চিন্তা ত্যাগ করে কীভাবে সমস্যার সমাধান করবেন।আর তারই ফলপ্রসূতে তিনি দুশ্চিন্তাবিহীন কৌশল গত ত্রিশ বছর কাজে লাগিয়ে আসছেন।
খুবই সরল ব্যাপার। তিনি যে তিনটি দাপ প্রয়োগ করে দুশ্চিন্তাবিহীন ভাবে জীবন কাটিয়েছে, সেই তিনটি দাপের কথা আজকে উল্লেখ করব। যে কেউ কাজে লাগাতে পারবেন।
প্রথম ধাপঃ তিনি সব ব্যাপারটি নির্ভয়ে ভালো করে ভেবে বের করতেন,তাঁর বিফলতার জন্য সবচেয়ে খারাপ কী হতে পারে।তিনি তাঁর চিন্তা ধারায় রাখতেন তাঁকে কেউ জেলে দেবে না বা গুলি করবেন না,এটা নিশ্চি। তবে এটা হতে পারে যে তাঁর চাকরি যেতে পারে,আর তা ছাড়াক কোম্পানিকে হয়তো যে মেশিন বসিয়েছেন তা সরিয়ে নিতে হতে পারে আর তাতে ক্ষতি হবে বিশ হাজার ডলার।
দ্বিতীয় ধাপঃ সবচেয়ে খারাপ যা হতে পারে ভাববার পর ঠিক করলেন ওই অবস্থা মেনে নিতে হবে।নিজেকে বললেন,এই ব্যর্থতা তাঁর সুনামে আঘাত করবে আর চাকরিও হয়তো হারাবেন। তা যদি হয় কাজ পেয়ে যাবেন। অবস্থা তো আরও খারাপ হতে পারত,বিশেষ করে তাঁর নিয়োগ কর্তাদের__যাই হোক তারা তো পরীক্ষামূলকভাবে নতুন পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছিলেন,বিশ হাজার ডলার না হয় পরীক্ষার ব্যয়, এ ক্ষতি তারা সহ্য করতে পারবেন।
'সবচেয়ে খারাপ অবস্থাটা ভেবে নেওয়ার পর তিনি বেশ হালকা বোধ করলেন আর মনের শান্তি ফিরে পেলেন,যা বেশ কটা দিনই ছিলো না'।
তৃতীয় ধাপঃ তখন থেকেই তিনি শান্তভাবে তাঁর সময় ওই চরম যে খারাপ অবস্থাকে মেনে নিয়েছিলেন তা থেকে নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করলেন।
'এবার চেষ্টা করতে লাগলেন, যে ক্ষতি তাঁদের হলো সেই বিশ হাজার ডলারের চেয়ে ক্ষতিটা কতটা কম করতে পারেন। নানারকম পরীক্ষা চালানোর পর দেখলেন তাঁর প্রতিষ্ঠান যদি পাঁচ হাজার যন্রপাতির জন্য খরচ করে তা হলে সমস্যা মিটে যায়।তাঁরা তাই করলেন আর পনেরো হাজার ডলার বাঁচাতে সক্ষম হলেন'।
তিনি সম্ভবত এটা করতে পারতেন না যদি শুধু দুশ্চিন্তাই করে যেতেন, কারণ দুশ্চিন্তা আমাদের মনঃসংযোগ নষ্ট করে দেয়।
আমরা যখন দুশ্চিন্তা করি তখন আমাদের মন এখানে ওখানে লাফ মেরে চলে আর আমরা মনস্থির করার শক্তি হারিয়ে ফেলি।আবার আমরা যখন খারাপ অবস্থাকে মনের দিক থেকে মেনে নিই আমরা তখন এলোমেলো চিন্তার হাত থেকে রেহাই পাই।
যে ঘটনার কথা বললাম সেটা বহু বছর আগে ঘটেছিল উইলিস এইচ.ক্যারিয়ার জীবনে।
সেটাই এমন চমৎকার ফল হয় যে তিনি তখন থেকেই এটা কাজে লাগিয়ে চলেছেন,তাঁর জীবনে আর দুশ্চিন্তা দেখা দেয়নি।
Comments
Post a Comment